Bengali Horror Story : ডাইনীর প্রতিশোধ একটি রহস্যময় বাংলা ভৌতিক গল্প, যেখানে গ্রামবাসীরা এক ভয়ঙ্কর প্রতিশোধের মুখোমুখি হয় ।
পড়ুন এই ভৌতিক কাহিনী / Bengali Horror
Story, যা আপনাকে সারা রাত তাড়া করবে।
গ্রামের নামটা সুন্দর, লামডিং । নেপালের বিরাটনগর অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩০ কি.মি
দূরে পাহাড়ের কোলে এই গ্রাম । বেশিরভাগ লোক এখানে চাষ-বাস করে দিন কাটাতো । এখানে
সবাই মিলে খুব সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো । গ্রামের মধ্যে ছিলো এক বড় প্রাসাদের মতো
বাড়ি । সেই বাড়ি ছিলো গ্রামের পুরানো জমিদারের । একসময় তাদের খুব
খ্যাতি-প্রতিপত্তি এবং সেই সঙ্গে প্রচুর দাপট ছিলো । কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সেই
প্রাসাদ ফাঁকা হয়ে পড়ে থাকতো, খাঁ-খাঁ করতো । শুধু একজন বৃদ্ধ চাকর সেই বাড়ির
দেখাশোনা করতো, কিন্তু সেও সেই বাড়িতে রাতে থাকতো না । রোজ সকালে আসতো আর সন্ধে
হওয়ার আগেই সে গ্রামে তার নিজের বাড়িতে ফিরে যেতো । সন্ধ্যা হওয়ার পরে সে্ই বিশাল
প্রাসাদ দেখলে কেমন ভয় ভয়, গা ছমছম করা ভৌতিক অনুভূতি হতো । সন্ধ্যার পরে সেই
প্রাসাদের দিকে কোন গ্রামবাসী যেতো না । শোনা যেতো রাতের বেলায় কোন মহিলা নাকি সেই
প্রাসাদে কাঁদতো আর ঘুরে বেড়াতো ।
গ্রামের ভয়াবহ ইতিহাস
সেই জমিদারদের একজন পূর্বপুরুষ বীরবাহাদুর ছিলেন খুব অত্যাচারী । তিনি
গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার করতেন তো বটেই, এমনকি আশে-পাশের গ্রামের এবং পুরো
পরগণার লোক তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলো । তার ছিলো একদল ঘোড়সওয়ার বাহিনী । তার সেই
বাহিনীর জোরে গ্রামবাসীদের এবং আশেপাশের জমিদারদের ধন-সম্পদ তিনি লুঠ করতেন । তার
অত্যাচারে তার গ্রাম এবং আশে-পাশের গ্রামের মহিলারাও ছাড় পেতেন না । যাকে তার
পছন্দ হতো, তিনি তাকে জোর করে বন্দী করে ধরে আনতেন প্রাসাদে । তারপর কয়েকদিন পরে
তার উপর অত্যাচার করে তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতেন অথবা তলোয়ার দিয়ে হত্যা করে তার
দেহ নদীর জলে ভাসিয়ে দিতেন । এটা তার খুব প্রিয় মজার এবং আনন্দের বিষয় ছিলো ।
কিন্তু তিনি খুবই রাজাভক্ত এবং বীর ছিলেন । একবার অন্য দেশের এক রাজা তাদের
রাজ্য আক্রমণ করলে রাজা তাকে ডেকে পাঠান । রাজার আদেশে তার ঘোড়সওয়ার বাহিনী নিয়ে
তিনি প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করে আক্রমণকারী রাজাকে তাড়িয়ে দেন বলে শোনা যায় । কিন্তু
সেই যুদ্ধে তিনি খুবই আহত অবস্থায় বাড়ি ফেরেন এবং শোনা যায় সেই যুদ্ধে তার একটি
হাতও কাটা যায় ।
তারপরে তার আত্মীয়রা দূরের এক গ্রামের জমিদারের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেন ।
সেই মেয়েটি এসে তাকে সেবা-শুশ্রুষা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন, কিন্তু ঠিক হয়ে ওঠার
পরেও তিনি আর প্রাসাদের বাইরে বেরোতেন না । তখন তার স্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে সমস্ত
জমিদারীর কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন । তার স্ত্রী ছিলেন খুবই দয়ালু প্রকৃতির । তিনি
গ্রামের সমস্ত প্রজাদের খুবই ভালোভাবে দেখাশোনা করতেন । তার সময়ে এ্ই বাড়ির
সম্মান, খ্যাতি-প্রতিপত্তি প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছিলো । শোনা যায়, তার স্ত্রীর
প্রভাবে তার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিলো । প্রজারা তাকে “রানীমা” বলে ডাকতো ।
সামান্য জমিদারের স্ত্রী হয়েও তার কর্মের জন্যে তিনি রানীর সম্মান পেতেন ।
রানীমার সুশাসন ও তার বংশধরের প্রত্যাবর্তন
বীরবাহাদুরের দুই পুত্র সন্তান হয় এবং তাদের বংশ এগিয়ে যেতে থাকে । তার সন্তানেরাও তার মায়ের স্বভাব পেয়েছিলো । তাদের সু-শাসনে গ্রামের সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো । শোনা যায়, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তাদের এক বংশধর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে ঘরছাড়া হয়েছিলো ।
তাদেরই এক বংশধর পড়াশোনার জন্যে বিলেত চলে গিয়েছিলো । কিন্তু গ্রামে যারা
থাকতো, জমিদারদের সেইসব বংশধরেরা সবাই একে একে অস্বাভাবিকভাবে মারা যায় । কেউ জলে
ডুবে মারা গেছেন, কেউ গাড়ি দূর্ঘটনায়, কেউ ঘুরতে গিয়ে পথ দুর্ঘটনায়, কেউ দুরারোগ্য
অসুখে তো কেউ আকস্মিকভাবে হৃদরোগে । বাকি যারা ছিলেন, ধীরে ধীরে তারা সবাই সেই
বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় বসবাস করা শুরু করেন ।
ইংল্যান্ডে সেই বংশের যে বংশধর ছিলেন তিনি হঠাৎ বহু বছর পরে খবর পাঠালেন যে,
তিনি দেশে ফিরছেন এবং গ্রামের বাড়িতে সপরিবারে থাকবেন । সেই বাড়ির চাকরের মুখে
গ্রামের সবাই সেই খবর শুনে খুব খুশি হলেন । গোটা গ্রামের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বয়ে
গেলো । গোটা গ্রাম সেজে উঠলো উৎসবের সাজে
। সবাই অপেক্ষা করতে আর দিন গুনতে লাগলো সেই দিনটার, যে দিন তাদের গ্রামে
“রানীমা”র বংশধর এসে পৌঁছাবে ।
দেখতে দেখতে সেই দিন এসে পৌঁছালো আর তাদের রানীমার
বংশধর তার স্ত্রী আর তাদের একটি ছোট ছেলেকে নিয়ে এসে গ্রামে পৌঁছালো । গ্রামের
মুখিয়াসহ সমস্ত বৃদ্ধরা তাদের স্বাগত জানালো রাজার মতো করে । গোটা গ্রামে
জমিদারদের সেই পুরানো বাড়িকে ঘিরে উৎসব লেগে গেলো । রানীমার বংশধর কন্দর্পবাহাদুর
এসেই ঘোষণা করে দিলেন যেহেতু তিনি একজন বড় ইঞ্জিনীয়ার এবং বিদেশে প্রচুর অর্থ
উপার্জন করেছেন, তাই আর তিনি বিদেশে ফিরে যেতে চান না, সেখানেই গ্রামে থেকে যেতে
এসেছেন । তার ইচ্ছা সেখানকার মানুষের জন্যে তিনি সরকারকে একটি জলাধার নির্মাণের
প্রস্তাব দেন, যাতে সেই প্রদেশের মানুষের চাষের জলের সমস্যা চিরতরে মিটে যায় এবং
সেই কাজে তিনি গ্রামবাসীদের সমর্থন চান । গ্রামের সবাই চিৎকার করে তাকে সমর্ধন
জানালো । তারপরে তারা সবাই বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে সেই বিশাল বাড়ির অন্দরমহলে চলে
গেলো ।
অজানা অসুখ
কিন্তু সেইদিন রাত থেকেই তাদের ছোট ছেলেটির শরীর
খারাপ হতে লাগলো । প্রথমে সবাই ভাবতে লাগলো আবহাওয়ার পরিবর্তন বা এতোদূর আসার ধকলে
তার শরীর খারাপ হয়েছে । দু-একদিন বিশ্রাম নিলে এবং ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করলেই
সব ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু তা হলো না, বরং
তার স্বাস্থ্যের আরো অবনতি হতে লাগলো ।
কন্দর্পবাহাদুর তাড়াতাড়ি ডাক্তারের ব্যবস্থা করলেন ।
ডাক্তার এসে ছেলেটিকে দেখে ওষুধ দিলেন, কিন্তু কোন লাভ তো হলোই না বরং নতুন আরেকটি
ভয়ঙ্কর লক্ষণ দেখা দিলো । ছেলেটি মাঝে মাঝেই পেটে প্রচন্ড ব্যথায় কুঁকড়ে যেতে লাগলো
আর তার সারা শরীর নীল হয়ে যেতে লাগলো । কন্দর্পবাহাদুর দেরী না করে কাছের শহরের
হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে দেখাতে চলে গেলেন । সেখানে সমস্ত কিছু পরীক্ষা করেও কোন
অসুখ খুঁজে পাওয়া গেলো না । হাসপাতালের চিকিৎসায় ছেলেটির কোন উপশমও হলো না । দিন-তিনেক
হাসপাতালে কাটাবার পরে তারা ছেলেকে নিয়ে আবার গ্রামে ফিরে এলো । আসলে
কন্দর্পবাহাদুরের স্ত্রী আর তার ছেলেকে নিয়ে সেখানে থাকতে রাজি হচ্ছিলো না । সে
চাইছিলো বিদেশে গিয়ে তার ছেলের চিকিৎসা হোক ।
কন্দর্পবাহাদুরও আর কোন উপায় না দেখে বিদেশে ফিরে
গিয়ে ছেলের চিকিৎসার কধাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলো । আর সেইসব ব্যবস্থা করার জন্যেই
তারা হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছিলো । তারা ফিরে আসার পরে গ্রামের
বৃদ্ধ কবিরাজ কন্দর্পবাহাদুরের কাছে এসে একবার তার ছেলেকে দেখতে চাইলো । গোটা
গ্রামের মানুষরা তখন বিষণ্ণ অবস্থায় বাড়ির সামনে এসে হাজির হয়েছিলো ।
গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধ মানুষের সঙ্গে এসে যখন বৃদ্ধ
কবিরাজ তার ছেলেকে একবার দেখতে চাইলো, তখন কন্দর্পবাহাদুর বা তার স্ত্রী কোনরকম
আপত্তি জানালো না । তারা সম্মানের সঙ্গে বৃদ্ধ কবিরাজ আর গ্রামের বয়স্ক মানুষদের
অন্দরমহলে নিয়ে গেলো । গ্রামের কবিরাজ ছেলেটিকে যখন দেখলেন তখন তার মৃতপ্রায়
অবস্থা । কবিরাজ তাকে পরীক্ষা করে দেখার পরে কন্দর্পবাহাদুরকে বললেন, শোনো তোমার
ছেলেকে যদি বাঁচাতে চাও, তাহলে দেরী না করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে কয়েক
মাইল দূরে একটা পাহাড়ের উপরে এক তান্ত্রিক থাকেন, তার কাছে নিয়ে যাও । পৃথিবীর কোন
ডাক্তারের ক্ষমতা নেই একে বাঁচায়, তোমরা বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করতে করতে অনেক
দেরী হয়ে যাবে ।
তখন কন্দর্পবাহাদুর তার কাছে জানতে চাইলো, কেন তিনি
এমন বলছেন । কবিরাজ তখন তাকে জানালেন এখন এসব কথা বলে সময় নষ্ট না করে তার এখুনি
বেরিয়ে পড়া উচিত, তুমি তান্ত্রিকের কাছে গেলে সব জানতে পারবে । যতো দেরী করবে
তোমার ছেলের আয়ু কমবে, দেরী করো না । আমাদের রানীমার শেষ বংশধর এই ছেলেটি । এইসব
কথা শুনে কন্দর্পবাহাদুরের স্ত্রী ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন এবং
কন্দর্পবাহাদুরকে অনুরোধ করলেন তাড়াতাড়ি সেই তান্ত্রিকের কাছে যাওয়ার জন্যে ।
গ্রামের বয়স্করা কন্দর্পবাহাদুরকে বোঝাতে লাগলেন যে তারাও সঙ্গে যাবেন এবং সে যেন
দেরী না করে । কন্দর্পবাহাদুর দেরী করলেন না । তৎক্ষণাৎ স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে
গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে রওনা দিলেন সেই তান্ত্রিকের উদ্দেশ্যে ।
পাহাড়ের নীচ থেকে বেশ কিছুটা উপরে উঠে একটা গুহা । আর
সেই গুহার মধ্যে বহু প্রাচীন কালের পাথরের এক কালীমূর্তি রয়েছে । এক সময় সেখানে
সেই দেবীর পূজা হতো । কিন্তু তারপরে বহুকাল ধরে সেই পাহাড়ে মানুষের আনাগোনা কমতে
কমতে পূজা বন্ধ হয়ে যায় । তারপরে বহুকাল ধরে সেই গুহায় কেউ আসতো না । কিছু বছর হলো
এক তান্ত্রিক এসে সেই গুহায় থাকতে শুরু করে আর মায়ের পূজা-অর্চনা করতে থাকে ।
কিন্তু সেই তান্ত্রিক গুহা থেকে বেরোয় না, গুহার মধ্যেই নিজের তন্ত্র-সাধনা নিয়ে
ব্যস্ত থাকে । আর লোকজনেরা পূজা দিতে এলে তিনি মায়ের পূজা দিয়ে তাদের হাতে প্রসাদ
তুলে দেন । মানুষেরা যা খুশি হয়ে তাকে যা ফল-মূল বা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য দিয়ে
যায়, তাই দিয়েই তিনি চালিয়ে নেন । পাহাড়ের কিছুটা উপরে উঠতে শুরু করলেই তার
মন্দ্রধ্বনিতে মন্ত্র-উচ্চারণ শুনতে পাওয়া যায় ।
সেদিনও সেইরকমই হচ্ছিলো, কন্দর্পবাহাদুর তার ছেলেকে
কোলে নিয়ে যখন গ্রামের বয়স্কদের আর স্ত্রীর সঙ্গে পাহাড়ে ওঠা শুরু করলো,
তান্ত্রিকের গম্ভীর গলার মন্ত্র-উচ্চারণ শোনা যাচ্ছিলো । কিন্তু কিছুদূর উপরে ওঠার
পরেই মন্ত্রের শব্দ থেমে যায় । যখন তারা আরো একটু উপরে উঠে যায়, তখন দেখতে পায়
তান্ত্রিক গুহার মুখ থেকে তাদের দিকেই নেমে আসছে । গ্রামের বয়স্করা এই ঘটনা দেখে
আশ্চর্য হয়ে যায়, কারণ তান্ত্রিককে তারা এর আগে কখনো গুহার বাইরে আসতে দেখেনি বা
আসার কথা শোনেনি ।
তান্ত্রিক এবং ডাইনী
তান্ত্রিক আরো কিছুটা নেমে এসে কন্দর্পবাহাদুরের কাছে
এসে তার ছেলেকে ভালো করে দেখে বলে ওঠে, তাড়াতাড়ি ওকে আমার কোলে দাও, সময় বড্ড কম ।
কন্দর্পবাহাদুর মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার ছেলেকে তান্ত্রিকের হাতে তুলে দেয় । আর
তান্ত্রিক তাকে নিয়ে দ্রুত পায়ে পাহাড়ের গুহায় গিয়ে ঢোকে, আর তার পিছু পিছু এসে
ঢোকে কন্দর্পবাহাদুর, তার স্ত্রী আর গ্রামের বয়স্করা । বাচ্চা ছেলেটির সারা শরীর
তখন নীলবর্ণ ধারণ করেছে আর সে অচৈতন্য হয়ে পড়েছে । তান্ত্রিক বাচ্চাটিকে নিয়ে গিয়ে
দেবীমূর্তির পায়ের কাছে একটি গোল রেখার মাঝখানে শুইয়ে দেয় । আর উপস্থিত সবাইকে
তান্ত্রিক কোন অবস্থাতেই কোন কথা বলতে নিষেধ করে দেয় । আর মন্ত্র পড়তে পড়তে
বাচ্চাটির গায়ে তার সাধনার বিভূতি ছুঁড়ে মারতে শুরু করে । দু-তিনবার এইরকম করার
পরে বাচ্চাটি চোখ মেলে উঠে বসে, তার চোখদুটো তখন রক্তের মতো লাল ।
তান্ত্রিক বাচ্চাটিকে উদ্দেশ্য করে রাগী গলায় প্রশ্ন
করে – “তু্ই এই বাচ্চার শরীরে ঢুকেছিস কেন? এতো বছর পরেও তোর প্রতিশোধের আগুন
নেভেনি?” উত্তরে শিশুটি এক মহিলার কন্ঠে উত্তর দিলো, “আমার প্রতিশোধের আগুন এদের
বংশ ধ্বংস করে না দেওয়া অবধি নিভবে না । আমি এই ছেলেকে, ওর বাবাকে সবাইকে মারবো ।“
তান্ত্রিক বললো, “আমি থাকতে তা হতে দেবো না । তুই চলে যা ওর শরীর ছেড়ে ।“ বলে
ছেলেটির দিকে বিভূতি ছুড়ে মারতেই সে মাটিতে শুয়ে পড়ে ছটফট করতে লাগলো । যেন তার
শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে । এইসব দেখে ছেলেটির মা এগিয়ে যেতে যাচ্ছিলো ।
কন্দর্পবাহাদুর এতোক্ষণ হতবাক হয়ে সব দেখছিলো, সে তৎক্ষণাৎ তার স্ত্রীর হাত ধরে
তাকে আটকালো এবং ইশারায় চুপ করে থাকতে বললো ।
কিছুক্ষণ ধরে ছটফট করার পরে হঠাৎ বাচ্চাটি তার পায়ের
আঙুলের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো । আর উগ্র-রাগী গলায় তান্ত্রিককে বলতে
লাগলো, “তুই আমায় প্রতিশোধ নিতে বাধা দিলে তোকেও আমি ধ্বংস করবো আনন্দনাথ । তুই
আমায় ছেড়ে দে । আমি ওদের সবাইকে মারবো, তবে আমার শান্তি হবে ।” তান্ত্রিক তখন তাকে
বলতে লাগলো “যা হওয়ার হয়ে গেছে, এই শিশু বা তার বাবা-মা তো কোন অন্যায় করেনি । তুই
বাচ্চাটাকে ছেড়ে দে ।“
বাচ্চার গলার এইরকম অদ্ভূত আওয়াজ শুনে কন্দর্পবাহাদুর
আর তার স্তী বেশ ভয় পেয়ে গেলেন । তারা বুঝতে পারছিলেন না কেন এইরকম হচ্ছে । কিন্তু
এটা বুঝতে পারছিলেন যে, এই তান্ত্রিকের কাছে না এলে তারা হয়তো আর তাদের বাচ্চাকে
ফিরে পেতেন না । তাদের অজান্তেই হাত জড়ো হয়ে বুকের কাছে এসে স্থির হয়ে গেলো
তান্ত্রিকের উদ্দেশ্যে । তাদের মতোই অন্যান্য বয়স্ক গ্রামবাসীদেরও তাই হলো ।
তান্ত্রিক বলতে লাগলেন “আমি কোন কথা শুনতে চাই না,
তুই এই বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যা । আর যাওয়ার সময়ে গুহার মুখে রাখা ভারী লোহার
ঘড়াটা ফেলে দে । যাতে আমি বুঝতে পারি তুই এই বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়েছিস ।“ কিন্তু
বাচ্চার ভেতর থেকে সেই মহিলা কন্ঠ বলতে লাগলো, “না, আমি ওকে ছাড়বো না । ওকে মেরে
আমি আমার প্রতিশোধ চরিতার্থ করবোই ।“ তান্ত্রিক তখন আরো গম্ভীর স্বরে মন্ত্র
উচ্চারণ করতে লাগলেন আর ঘন ঘন বাচ্চাটির দিকে বিভূতি ছুঁড়তে লাগলেন । আর সেই
বিভূতি গায়ে লাগতেই বাচ্চাটি ছটকাতে লাগলো আর সেই মহিলা কন্ঠে চিৎকার করতে লাগলো ।
কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ বাচ্চাটি ছটকানো থামিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো আর সেই মূহুর্তে একটা
ঝোড়ো হাওয়া যেন ধাক্কা মেরে দরজার কাছে রাখা লোহার ঘড়াটা উল্টে দিয়ে গেলো ।
বাচ্চা ছেলেটি মাটিতে শুয়েছিলো, হঠাৎ জ্ঞান ফিরে সে "মা, মা" করে মাকে খুঁজতে লাগলো, তান্ত্রিক পরম আদরে ছেলেটিকে কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে এসে তাকে মায়ের কোলে তুলে দিয়ে বললেন, “এই নে মা, তোর
ছেলে । এখন আর কোন ভয় নেই ওর । ডাইনী ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে ।“
ডাইনীর রাগের কারণ
গ্রামের বয়স্করা তখন তান্ত্রিককে অনুরোধ করলেন কেন
এমন হয়েছিলো জানাতে । তখন তান্ত্রিক তাদের জানালেন, কন্দর্পবাহাদুরের পূর্বপুরুষ
বীরবাহাদুর একটি স্ত্রী-লোককে ধরে এনে তার উপরে অত্যাচার চালায়, সে তখন তাকে
বারবার ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে । কারণ তখন সে গর্ভবতী ছিলো । কিন্তু বীরবাহাদুরের
কানে তার অনুরোধ পৌঁছায়নি । অত্যাচারের পর বীরবাহাদুর তাকে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে
মারে । তখনই সে আগুনে পুড়তে পুড়তে শপথ করে যে, বীরবাহাদুরের সমস্ত বংশধরকে শেষ
করবে, তাকে নির্বংশ করে দেবে । আর সেই স্ত্রী-লোকই ডাইনী হয়ে ফিরে এসেছে, আর
বীরবাহাদুরের বংশে একের পর এক অজ্ঞাত মৃত্যুর কারণ হয়েছে । কেউ তা জানতেও পায়নি ।
ধীরে ধীরে সে প্রায় সমস্ত বংশধরকে শেষ করে দিয়েছে । কিন্তু যেহেতু কন্দর্পবাহাদুর
আর তার সন্তান বেঁচে ছিলো তাই তার মুক্তি ঘটেনি, সে ঘুরে বেড়িয়েছে সেই পরিত্যক্ত
বাড়িতে ।আর এখন কন্দর্পবাহাদুর ফিরে আসতেই সে তার ছেলেকে শেষ করার জন্যে আক্রমণ
করেছে ।
গ্রামের বয়স্ক মানুষেরা তান্ত্রিকের কাছে হাতজোড় করে
জানতে চাইলো, তাহলে এই ডাইনীর হাত থেকে এই পরিবারকে বাঁচাবার কি কোন উপায় নেই ?
তখন তান্ত্রিক বললো-আছে, অবশ্যই আছে । কিন্তু তার জন্যে আমাকে সেই প্রাসাদে যেতে হবে । রানীমার ব্যবহার করা কোন
উপযুক্ত জিনিস পেলেই একে চিরতরে তাড়ানো যাবে, তার আগে নয় । তবে ভয় নেই । এখুনি ও
আর তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না । আজ রাতর মতো তোমরা তিনজন এ্ই মন্ত্রপড়া
বিভূতির টীকা নিয়ে যাও বলে তাদের কপালে টীকা দিয়ে দিলেন । আর সঙ্গে কিছুটা বিভূতি
দিয়ে দিলেন আর বললেন, কপাল থেকে টীকা মুছে গেলে আবার লাগিয়ে নেবে । কাল সকালে আমি
তোমাদের প্রাসাদে আসবো আর সব ব্যবস্থা করবো । গ্রামেরা বয়স্করা তাঁকে ধন্য ধন্য
করে বারবার প্রণাম করতে লাগলো । কন্দর্পবাহাদুর আর তার স্ত্রী তাঁকে প্রণাম করলেন
। তান্ত্রিক তাদের সবাইকে আশীর্বাদ করে তখনকার মতো চলে যেতে বললেন । কন্দর্পবাহাদুর
আর তার পরিবার ধীরে ধীরে তারা পাহাড়ের নীচে এসে প্রাসাদে ফিরে এলেন ।
এখানেই কিন্তু এই কাহিনীর শেষ নয়, বরং শুরু হলো । তান্ত্রিক কি করে ডাইনীকে প্রাসাদ থেকে তাড়ালেন, সেই কাহিনী আমি অন্য একটি গল্পে লিখবো । গল্প পড়ে ভালো লাগলে অন্যকে শেয়ার করবেন । এই ব্লগ পড়তে থাকুন । শিগগিরিই আমরা লিখবো কি করে ডাইনীকে কি করে প্রাসাদ থেকে তাড়ানো হলো সেই কাহিনী । আর অবশ্যই কমেন্ট করবেন ।
আরো বাংলা গল্প পড়ুন - বাংলা ছোট গল্প : অনির ফিরে আসা


0 মন্তব্যসমূহ