বাংলা ছোট গল্প : বাংলা ছোটগল্প / Bengali Short Story মানেই আবেগ, হাসি-কান্না আর জীবনের প্রতিচ্ছবি। আজকের গল্প “অনির ফিরে আসা”–তে রয়েছে পারিবারিক টানাপোড়েন, ভালোবাসা, দুষ্টুমি, আর জীবনের নির্মম বাস্তবতা। পড়তে পড়তে আপনিও হারিয়ে যাবেন অনির সঙ্গে।একটি হৃদয়স্পর্শী বাংলা ছোটগল্প পড়ুন এবং অনুভব করুন আবেগ, কষ্ট আর বাস্তবতার ছোঁয়া।
হাসপাতালের বেডে অনি
হাসপাতালের বেডে অনি শুয়ে আছে । অনির কোন জ্ঞান নেই । ডাক্তার বলে দিয়েছে, বেঁচে ফিরে আসার আশা খুবই কম । অনির ঘাড় ভেঙেছে, একটা হাত দু’টুকরো হয়েছে । দুটো পায়েরই কোনটাই আস্ত নেই । আর মাথা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে প্রচুর । তাকে ঘিরে রয়েছে তার পরিবারের লোকজন । অনির মা কান্নাকাটি শুরু করেছেন । ঠাকুমা এককোণে বসে ঠাকুরকে ডাকছেন । দিদি শুকনো মুখে বিছানার এককোণে বসে । অনির জেঠু আর তার বাবা উদ্বিগ্ন মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে । পাড়ার দু’একজন দাদারা মাঝে মাঝেই ঘুরে যাচ্ছে । হাসপাতালের বাইরে ক্লাবের দাদারা, পাড়ার বেশ কিছু কাকুরা উদ্বিগ্ন মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে । নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা করছে । কিন্তু কি করে এইরকম হলো অনির ?
অনিদের পরিবার
কোলকাতা থেকে একটু দূরে, উত্তর চব্বিশ পরগণার মধ্যমগ্রামের একটা পাড়ায় অনি মানে অনিরুদ্ধদের বাড়ি । তারা সেখানকার অনেকদিনের পুরানো বাসিন্দা । অনেক পুরানো বাড়ি তাদের । বাড়িতে তাদের অনেক লোকজন । অনি, ঠাম্মা, অনির বাবা-মা, অনির দিদি অনিতা, অনির জ্যেঠু-জেম্মা, জ্যেঠতুতো দাদা অলোক, জ্যেঠতুতো দিদি অনিমা - কিন্তু তার বিয়ে হয়ে গেছে । তার জ্যেঠতুতো দাদা অনিমেষ সল্টলেকে একটা আই.টি কোম্পানীতে কাজ করে । যাতায়াতের অসুবিধা হয় বলে সে অফিসের কাছেই একটা ফ্ল্যাটে আরো দু’জন বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করে থাকে । আর মাঝে মাঝেই কোন কোন শনিবার অফিসের পরে চলে আসে বাড়িতে । আবার সোমবার বাড়ি থেকে সরাসরি অফিসে যোগ দেয় ।
অনিদের পাড়ায় সবাই মিলেমিশে থাকে । পাড়ায় খুব বড় দুর্গাপূজা হয় । সেই সময় অনিমা দিদি, জামাইবাবু আর তাদের দু’জন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে চলে আসে তাদের মধ্যমগ্রামের বাড়িতে । সারা বাড়িটা গমগম করে । খুব আনন্দ, হইচই হয় তখন ।
বাড়িতে সবার থেকে ছোট বলে অনি একটু বেশিই আদর পায় । গোটা পাড়াতেও সে খুবই বিখ্যাত, আর তার কারণ হলো তার দুষ্টুমি । আর সে সব থেকে বেশি প্রশ্রয় পায় তার ঠাম্মার । কারণ, দুষ্টুমির ফলে প্রতিবেশীদের থেকে কোন অভিযোগ এলে তার বাবা যখন তাকে পেটাতে যায়, তখন তার একমাত্র রক্ষার জায়গা হলো ঠাম্মা । কিন্তু তা সত্ত্বেও সে তার বাবার থেকে কম মার খায় না । কারণ সে কাজগুলোও সেরকমই করে ।
অনির দুষ্টুমি
স্থানীয় স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে অনিরুদ্ধ । পড়াশোনায় খুব ভালো না হলেও প্রতি বছর পাশ সে করে যায় । কিন্তু মাঝে মাঝেই স্কুল থেকে হেডস্যার তার বাবাকে ডেকে পাঠান অনির কীর্তির অভিযোগ শোনানোর জন্যে । কখনো সে পেন দিয়ে সামনের বেঞ্চে বসা ছেলের জামায় ছবি এঁকে দেয় । আবার কখনো সে হোমওয়ার্ক করে নিয়ে যেতে ভুলে যায় । আবার কখনো সে পেন দিয়ে স্কুলের দেওয়ালে নিজের শিল্পকর্মের পরিচয় দিয়ে আসে । কখনো খেলার মাঠে মারামারি করে আসে । কখনো স্কুলের ছাত্রদের এবং স্যারেদের সাইকেলের হাওয়া ফেলে দেয় । আর এইসব কারণে মাঝেমাঝেই হেডস্যার তার বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়ে অনির এইসব কীর্তির কাহিনী শোনান । আর স্কুল থেকে ফিরে তার বাবা চড়াও হন অনির উপরে । আর তখন তার একমাত্র রক্ষাকর্তা হলো তার ঠাম্মা । গোটা পাড়ায় অনির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আর শত্রু হলো নবকুমার । কিন্তু নবকুমারটা আবার কে ?
অনির শত্রু : নবকুমার
নবকুমার হলো অনিদের একদম পাশের বাড়িতে থাকা বেবীপিসীর পোষা বিড়াল । বেবীপিসী বাংলায় এম.এ পড়ছে । আদর করে সে তার পোষা হুলো বিড়ালের নাম রেখেছে নবকুমার । নবকুমার গোটা পাড়ায় যখন তখন যেকোন বাড়ির রান্নাঘরে আক্রমণ করতে পারে । আর সে ব্যাপারে তার পারদর্শিতা সবাই একবাক্যে মেনে নেয় । আসলে কোন্ বাড়িতে কখন রান্নাঘরে কেউ থাকবে না সে ব্যাপারগুলো যেন নবকুমারের মুখস্থ । আর যখন অনি দুপুরে বাড়িতে থাকে তখন প্রায়শ:ই তার সঙ্গে নবকুমারের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় – কখনো ছাদের কার্নিশে, কখনো পাঁচিলের উপরে । কখনো বা নবকুমারের পিছনে ধাওয়া করে অনি । নবকুমারকে দেখলেই অনির যেন হাত নিশপিশ করে ওঠে আর সে ঢিল দিয়ে নবকুমারকে ছুঁড়ে মারে । বেশির ভাগ সময়েই অনি ব্যর্থ হয়, কারণ নবকুমারের গতি, স্কিল যেন লিওনেল মেসিকেও হার মানায় । তবে নবকুমারও কম যায় না । একবার ঘুড়ি পাড়তে তাদের বাড়ির পিছনের বাগানের একটি গাছে উঠছিলো অনি । বেশ অনেকটা উঠে যাওয়ার পরে যখন একটা সরু ডালে উঠতে যাবে অনি তখন দেখে আগে থেকেই সেই ডালে বসে আছে নবকুমার । আর তার ঠিক পিছনেই ঘুড়িটা আটকে রয়েছে । অনি বেশ কয়েকবার হুশ-হাশ করলে কি হবে নবকুমার তাতে পাত্তা তো দিলোই না, উলটে নিজের গা-লেজ ফুলিয়ে ফ্যাঁশসসসস করে এমন ভয় দেখালো যে অনি আরেকটু হলে গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছিলো । সেদিন বাধ্য হয়ে অনি গাছ থেকে নেমে এসেছিলো বটে, কিন্তু সেইদিনকার পর থেকে যেন দু’জনের শত্রুতাটা আরো মজবুত হয়েছে ।
নবকুমার বেবীপিসীর আদর-যত্নে আরো মোটা হয়েছে । এমনকি পাড়ার কুকুরগুলোও তাকে ভয় পায় । গরমের ছুটিতে মা-ঠাম্মারা খাওয়া-দাওয়ার পরে ঘুমিয়ে পড়লে অনি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে । কারণ সেই সময়েই তাকে ঢিল মেরে নাগ কাকুদের বাগান থেকে কাঁচা আম পেড়ে আনতে হয় । তারপরে সেই আমকে লুকিয়ে বেটে নুন-লঙ্কা দিয়ে মেখে ছাদে উঠে আয়েশ করে সে খায় । কোন কোনদিন ছাদ থেকে সে দেখতে পায় নবকুমার কিভাবে পা টিপে টিপে পাঁচিল বেয়ে যাচ্ছে তাদের বাড়ির ঠিক পিছনের বাড়ির রান্নাঘরের দিকে চুরি করবে বলে । সঙ্গে সঙ্গে ছাদ থেকেই নবকুমারের উপরে শুরু হয়ে যায় অনির ঢিল বৃষ্টি । আর এইসব কাজের জন্য প্রাথমিক কাজগলো অনি আগে থেকেই গুছিয়ে রাখে । মানে আগে থেকেই অনি মজুত রাখে নবকুমারকে ছুঁড়ে মারার জন্য তার পছন্দমতো ঢিল ।
নবকুমারের মৃত্যু
একদিন দুপুরে অনিদের বাড়ির সামনে অনির মুখোমুখি পড়ে গেলো নবকুমার । সঙ্গে সঙ্গে চকিতে তিন-চারটে ঢিল নিয়ে নবকুমারের পিছনে তাড়া করে গেলো অনি । নবকুমার পিছন ফিরে বিদ্যুতের গতিতে অনিদের বাড়ির চৌহদ্দী টপকে বড় রাস্তা টপকে রাস্তার অন্যপারে পালাতে গেলো । কিন্তু তার মধ্যেই দু’একটা ঢিল ছোঁড়া হয়ে গেছে অনির । কোনরকমে নবকুমার সেগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছে এবং যেন বেশি তাড়াহুড়ো করেই রাস্তা টপকে পালাতে গেছে । হঠাৎ অনি শুনতে পেলো ক্যাঁ-অ্যাঅ্যাঅ্যাচ্ করে একটা বড় গাড়ির ব্রেক কষার আওয়া্জ । অনি যতক্ষণে তাদের বাড়ির গেটের কাছে এসে পৌছালো ততক্ষণে সে এসে দেখলো একটা বড় লরি দারুণ গতিতে চলে যাচ্ছে । আর রাস্তার দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পেলো গাড়ির চাকায় পিষ্ট নবকুমারের শরীরটা । সারা রাস্তা ফাঁকা, কেউ কোথাও নেই । সে হঠাৎ ভয় পেয়ে একছুটে চলে গেলো ছাদে । আর সেখানে গিয়ে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলো । তার অতি বড় শত্রুর এইরকম পরিণতিতে অনি কাঁদলো কেন কেউ কখনো জানতেও পারলো না । কারণ নবকুমারের মৃত্যুর পিছনের এই ঘটনার কথা কেউ জানতে পারলো না একমাত্র অনি ছাড়া ।
বিকালে নবকুমারের মৃত শরীরটা দেখে গোটা পাড়ায় হইচই পড়ে গেলো । বড়দের মধ্যে মিটিং শুরু হয়ে গেলো কি করে রাস্তায় গাড়ির গতি কমানো যেতে পারে, কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, কার কার কাছে এই বিষয়ে আবেদন করা উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি । বেবীপিসী তিনদিন ধরে নবকুমারের শোকে কাঁদলো, প্রায় ছয়-সাত দিন ধরে সে কিছু খেলো না । তারপরে সবাই মিলে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে খাওয়ানো হলো । কিন্তু সে নবকুমারের স্মৃতিতে মাছ খাওয়া ছেড়ে দিলো । অনির মধ্যেও কিছু পরিবর্তন দেখা গেলো । এখনও সে দুষ্টুমি করলেও আগের মতো আর অতোটা নয়, বিশেষত: কুকুর-বিড়ালকে আর সে অযথা আঘাত করে না ।
অনির পতন
অনি ক্লাস এইটে উঠেছে । আর দিন সাতেক পরেই বিশ্বকর্মা পূজা । আকাশে ঘুড়ি ওড়া শুরু হয়ে গেছে । অনিও ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে । একটা পেটকাটি ঘুড়ি তার চাঁদিয়ালটার দিকে এগিয়ে আসছে প্যাঁচ লড়বে বলে । অনিও তৈরী, পেটকাটি ঘুড়িটাকে প্যাঁচে হারাবার জন্যে । পেটকাটি ঘুড়িটা গোঁৎ মেরে তার সুতোর দিকে আক্রমণ করছে । অনিও টানছে তার সুতোটাকে, যাতে করে পেটকাটিটার এই তীব্র আক্রমণটাকে কোনরকম ভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায়, সে প্রাণপণে চেষ্টা করছে তার ঘুড়িটাকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে, যাতে এবারকার মতো পেটকাটিটা তার সুতোর নাগাল না পায় । হঠাৎ সে পেছনে কিছুর সঙ্গে যেন ধাক্কা খেলো আর বুঝতে পারলো সে ছাদ থেকে নীচে পড়ে যাচ্ছে । সে ভয়ে একটা তীব্র চিৎকার করে উঠলো । তারপরে কিছুক্ষণ আর অনির কিছু মনে নেই ।
আত্মারূপে অনির ভ্রমণ
কিছুক্ষণ পরে সে দেখতে পেলো সে যেন হাওয়ায় ভাসছে । তার শরীরে ব্যথা-যন্ত্রণা, আাঘাতের চিহ্ন, রক্ত কিছ্ছু নেই । সে সব দেখতে পাচ্ছে, তাকে ঘিরে মানে তার শরীরটাকে ঘিরে মা হাউমাঊ করে কাঁদছে, দিদি কাঁদছে, পাড়ার সব দাদা-কাকুরা তাকে ঘিরে ধরেছে, ক্লাবের দাদারা ছুটোছুটি করছে । ঠাম্মা হাউমাউ করে কাঁদছে আর বলছে “আমার কি সর্বনাশ হলো গো, তোরা কেউ ওকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যা গো” ইত্যাদি বলে । পাশের বাড়ির অভ্র দাদা একটা ট্যাক্সি নিয়ে এসেছে । সবাই মিলে তাকে ধরাধরি করে সেই ট্যাক্সিতে তুলছে । ক্লাবের আরো দাদারা কেউ টোটো, কেউ অটো নিয়ে এসেছে । বাড়ির সবাই আর পাড়ার লোকজন যে যেরকম পারলো, সেই গুলোতে উঠে ট্যাক্সির পিছনে পিছনে চললো । অনিও যেন হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে চললো সেইদিকে ।
হাসপাতালের
বেডে অনি শুয়ে আছে, যতোটা পারা গেছে ব্যান্ডেজ করে রক্ত পড়া বন্ধ করা হয়েছে ।
ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছে, জ্ঞান না ফিরলে বেঁচে ফিরে আসার আশা প্রায় নেই বললেই চলে ।
সবাই উদ্বিগ্ন মুখে অনিকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ।
মায়ের কান্না আর থামছে না । এদিকে হাওয়ায় ভাসতে
ভাসতে অনি সেখানে পৌঁছে বাবা-মা, দিদি, ঠাম্মার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু
কেউ তার কথা শুনতে পায়নি । অভ্র দাদার কানে
কানে গিয়ে বলার চেষ্টা করেছে সে এখানেই আছে – কিন্তু কোন লাভ হয়নি ।
দু’একবার চেষ্টা করেছে তার শরীরটার মধ্যে গিয়ে শোয়ার ।
কিন্তু যতোবারই চেষ্টা করেছে, সে উঠেছে একা – তার শরীরটা তার সঙ্গে ওঠেনি ।
হঠাৎ করে কিছু যেন অনিকে টেনে নিয়ে আসতে লাগলো হাসপাতালের বাইরে । বাইরে আসার পরে সে যেন গ্যাস বেলুনের মতো কিন্তু বেশ দ্রুত গতিতে উপরদিকে উঠতে লাগলো । আর সবকিছু যেন দুরন্ত গতিতে ছবির মতো তার চারিপাশ দিয়ে, তার মধ্যে দিয়ে চলে যেতে লাগলো । ছোটবেলায় দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় যেমন ট্রেন থেকে দেখতে পেতো – গাছপালা, মাঠ, বাড়ি সব কিছু যেন ছুটে চলে যাচ্ছে । অনেকটা সেইরকম ভাবেই সব কিছু তাকে ঘিরে ছুটে চলে যাচ্ছে. তবে তফাৎটা হলো এখানে সে সামনের দিকে নয়, যেন উপরদিকে কোথাও উঠছে, আর ট্রেনের ভেতর থেকে সে দেখতো বাইরে সবকিছু যেন ছুটে চলে যাচ্ছে, এখানে তার উপর দিয়েই যেন সব কিছু ছুটে চলে যাচ্ছে । সে সবকিছু দেখতে পাচ্ছে, বুঝতে পারছে কিন্তু স্পর্শ করতে পারছে না বা তার সঙ্গে আঘাতও লাগছে না ।
অল্প কিছুক্ষণ পরেই তার গতিটা যেন কিছুটা কৌণিক মতো হয়ে গেলো । এবারে সে কিছুটা হলেও আগে থেকে দেখতে পাচ্ছে সামনে থেকে কি আসছে । সে দেখতে পাচ্ছিলো ছোটবেলা থেকে সে কি কি করেছে, কাকে কাকে ধরে মেরেছে, টিচারদের কাছ থেকে মার খাচ্ছে, সব যেন সিনেমার মতো তার সামনে থেকে আসছে আর তাকে অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে । হঠাৎ সে দেখতে পেলো, সে ঘুড়ি পাড়তে গাছে উঠেছে আর সামনে বসে আছে নবকুমার । সে কিছু বলার আগেই গা-লেজ ফুলিয়ে নবকুমার মারলো তাকে এক থাবা ! আর সঙ্গে সঙ্গে অনির গতি যেন বদলে গেলো, দুরন্ত গতিতে উল্কার মতো সে যেন এসে পড়লো হাসপাতালে শোয়া তার শরীরটার উপরে ।
অনির প্রত্যাবর্তন
একটা যেন হেঁচকি মতো বেরিয়ে এলো হাসপাতালের বেডে শোয়া অনির মুখ থেকে । আর ধীরে ধীরে সে চোখ মেলে তাকালো । আর দেখতে পেলো তার বাড়ির সকলকে । মা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো । ঠাম্মা তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে কাঁদতে লাগলো । পাড়ার দাদা-কাকু, কাকীমাদের মধ্যে যেন আনন্দের ঝড় বয়ে গেলো, সবাই হইচই করে উঠলো । অনির সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা । সারাটা শরীর যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে ।পা-দুটোয় অসহ্য যন্ত্রণা, পা-দুটো চেষ্টা করেও সে নাড়তে পারছে না । হইচই শুনে ডাক্তার ছুটে এসে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি তাকে একটা ইন্জেকশন দিয়ে দিলেন ।
আর
তারপরেই অনির প্রচন্ড ঘুম পেতে লাগলো আর ব্যথাটাও যেন অনেকটা কমে যেতে লাগলো, অনির
চোখের সামনে শুধুই ভেসে উঠতে লাগলো নবকুমারের গা-ফোলানো চেহারাটা নিয়ে তাকে থাবা
মারার দৃশ্যটা আর অনির চোখের কোল বেয়ে শুধু ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো ।
কেন, কার জন্যে, কিসের জন্য এই চোখের জল - তা একমাত্র অনি ছাড়া কেউ বুঝলো না ।
গল্পের শিক্ষা
“অনির ফিরে আসা” গল্পটি আমাদের
শেখায়—
- দুষ্টুমি আর খেলার মাঝেও দায়িত্বশীল হতে হয়।
- অযথা কোন পশু-পাখিকে আঘাত করতে নেই ।
- পরিবার আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়।
- প্রতিটি কাজের প্রতিদান একদিন ফিরে আসে।
- জীবনে পরিবর্তন আসে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।
গল্প পড়ে যেকোন একটি
কমেন্ট করুন । আপনার কমেন্ট আমাদের উৎসাহিত করে, আমাদের সঙ্গে থাকার প্রমাণ দেয় ।
দয়া করে কমেন্ট করতে ভুলবেন না ।
আরো বাংলা গল্প পড়ুন –


0 মন্তব্যসমূহ