বাংলা গল্প পড়তে অনেকেই ভালবাসেন । আর সেই গল্প যদি বাংলা অ্যাডভেঞ্চার গল্প তাহলে তো কথাই নেই । আজ আমরা একটি বাংলা গল্প পড়বো । যে গল্পে দুটি যমজ বোনের গল্প রয়েছে । এই গল্পটি পড়ে আপনারা শুধু বাংলা অ্যাডভেঞ্চার গল্পর মজা পাবেন তাই নয়, এটিকে ছেলেধরার গল্প বা গোয়েন্দা গল্প হিসাবেও দেখতে পারেন । আসুন পড়ি দুটি যমজ বোনের একজন হারিয়ে যাওয়ার পর আরেকজনের অনুভূতির সাহায্যে অন্যজনের উদ্ধারের কাহিনী পড়ি এই বাংলা গল্পে ।
বাংলা অ্যাডভেঞ্চার গল্প : যমজ বোন টাপুর টুপুর ও আইসক্রিম
বাংলা অ্যাডভেঞ্চার গল্পর শুরু : টাপুর আর টুপুর দুই যমজ বোন । দুই জনেরই বয়স বারো । আসলে টাপুর, টুপুরের থেকে কয়েক মিনিটের বড়ো । দুজনকে দেখতে অবিকল একই রকমের । আর দুজনে একই রকমের জামা-কাপড় পরলে তো ব্যস্ । বাইরের কেউ আর আলাদা করে চিনতেই পারবে না যে কে টাপুর, আর কে টুপুর । শুধু তাদের মা সব বুঝতে পারেন, আর তাড়াহুড়োয় আলাদা করে বোঝার সুবিধার জন্যে একজনকে কপালের মাঝখানে, আরেকজনকে কপালের ধারে কাজলের টিপ পরিয়ে দেন । সব যমজদেরই ক্ষেত্রে হয় কিনা জানা নেই, তবে ছোটবেলা থেকেই টাপুর টুপুরের একজনের খিদে পেলেই অন্যজনেরও খিদে পেতো । একজন কাঁদতে শুরু করলেই অন্যজনও কাঁদতে শুরু করতো । একজনের শরীর খারাপ হলেই অন্যজনেরও শরীর খারাপ হতো ।
একটু বড় হওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে একটু পরিবর্তন হতে লাগলো । একজনের খিদে পেলে হয়তো অন্যজনেরও খিদে পেতো, কিন্তু অন্যজন বায়না করতো না বা তাদের মায়ের অসুবিধার কথা ভেবে কাঁদতো না । আর এইসব ব্যাপারে টাপুরই ছিলো একটু বেশি সচেতন আর একটু শান্ত স্বভাবের । সে সব বুঝতো আর ভেবে কাজ করা পছন্দ করতো । আর টুপুর ছিলো ঠিক তার উল্টো । সে ছিলো ডানপিটে আর একটু দুরন্ত স্বভাবের ।
টাপুর টুপুরদের বাড়িতে ছিলো অনেক লোক । মা, বাবা, জ্যেঠু, জেম্মা, দিদিভাই, ঠাম্মা, দাদু আর আরো তিন চারজন কাজের লোক । আসলে তাদের পরিবার ছিলো চন্দননগরের এক বনেদী পরিবার । তাদের অবস্থাও ছিলো দারুণ স্বচ্ছল । দাদু ছিলেন হাইকোর্টের একজন প্রাক্তন জজ । বাবা একজন বড় উকিল । তাছাড়াও ছিলো ভালো কাকু । তিনি কোলকাতায় থাকেন, কোলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন বড় অফিসার । ছুটি-ছাটা পে্লেই তিনি বাড়ি চলে আসতেন । আর তিনি বাড়ি আসলেই খুব মজা করতেন, বাড়ির ছোটদের নিয়ে হইচই করতেন । বাড়ির সমস্ত ছোটদের আবদার, বায়না সবই ছিলো এই ভালো কাকুর কাছে ।
টাপুর টুপরদের মামার বাড়ি খুব দূরে নয়, কাছে্ই শ্রীরামপুরে । তাদের মামাবাড়ির অবস্থাও ছিলো খুবই ভালো । তাদের মামাবাড়িতে বিশাল বড় বাড়ি, বাড়িতে রয়েছে দাদু, দিম্মা, বড়মামা, মামী, ছোটমামা, ছোটমামী আর দুই দিদি আর এক দাদা । দুই দিদি বর্ণা আর সুবর্ণা কলেজে গ্র্যাজুয়েশন পড়ছে । বড়দি বর্ণা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আর ছোড়দি সুবর্ণা প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর দাদা সুবর্ণ ওকালতি পড়ছে ফাইনাল ইয়ারে । দাদু রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার, বড়মামা একজন বড় উকিল আর ছোটমামা আয়কর বিভাগের বড় পদে চাকরী করেন ।
রথের মেলায় গোলমালের শুরু
রথের সময় প্রতি বছর টাপুর টুপুর মামার বাড়ি যায় আর শ্রীরামপুরের মাহেশের রথের মেলায় ঘুরতে যায় কখনো দাদার সঙ্গে, কখনো দিদিদের সঙ্গে, আবার কখনো বা বাড়ির সবাই মিলে । খুব মজা হয় তখন মামাবাড়িতে । ফাঁক পেলেই তারা কারোর না কারোর সঙ্গে চলে যায় মেলায় । একবার বা দু’বার নয়, অনেকবার তারা ঘোরে রথের মেলায় ।
প্রতি বছরের মতো সেই বছরেও টাপুর, টুপুর আর তার মা রথের দু’দিন আগেই চলে এলো মামাবাড়িতে । বাবা গাড়ি করে তাদের ছেড়ে দিয়ে গেছেন । কিন্তু বাবার কোলকাতায় কিছু কাজ আছে, বলে বাবা থাকতে পারেননি । গাড়ি নিয়ে চলে গেছেন কোলকাতায় । আবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় তিনি তাদের নিতে আসবেন ।
কোথায় হারিয়ে গেল টুপুর ?
রথের আগের দিন সকালে একটু বেলার দিকে বড়দি বর্ণার সঙ্গে টাপুর আর টুপুর এসেছে মেলায় ঘুরতে । গোটা মেলা তারা ঘুরছে, এই জিনিস দেখছে-সেই জিনিস দেখছে, টুকি-টাকি জিনিস কিনছে । দু’জনে দুটো চরকি পাখা কিনেছে আর রাস্তায় ফুঁ দিয়ে সেটাকে ঘোরাতে ঘোরাতে আসছে । আর সেই জন্যে মাঝে মাঝেই টুপুর বড়দির হাত ছেড়ে পিছিয়ে পড়ছে । হঠাৎ এক মোড়ের মাথায় এসে টাপুর আর তার বড়দি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে টুপুর নে্ই ! কোথায় গেলো টুপুর ? দু’জনে মিলে অনেক খুঁজলো আশেপাশের প্রায় সব গলি, রাস্তা । আবার গেলো তারা মেলায় । তন্নতন্ন করে খুঁজলো প্রায় গোটা মেলা । কিন্তু কোথায় টুপুর – কোথ্থাও তাকে খুঁজে পাওয়া গেলো না । বড়দি কাঁদতে লাগলো । কাঁদতে কাঁদতেই সে দাদা সুবর্ণকে মোবাইলে কল করে জানালো ঘটনাটা, আর জানালো তারা কোথাব আছে এবং কোধায় ঘটেছে ঘটনাটা । দাদা প্রায় তক্ষুনি বাইক নিয়ে এসে হাজির হলো । আর তাদের দু’জনকে বাইকে বসিয়ে প্রায় পুরো এলাকাটা তন্নতন্ন করে খুঁজলো – কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না টুপুরকে । ততোক্ষণে ছোটমামা আর বড়মামাও এসে হাজির হয়েছে আরো একটা বাইকে চড়ে । তারাও প্রায় গোটা এলাকাটা চষে ফেললো, কিন্তু টুপুরকে দেখতে পাওয়া গেলো না । তখন বড়মামা সুবর্ণকে বললেন – বর্ণা আর টাপুরকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যেতে । আর তিনি আর ছোটমামা বাইক নিয়ে গেলেন পুলিশ স্টেশনের দিকে ।
বাড়ি ফিরে যাচ্ছেতাই একটা কান্ড হলো । মা কাঁদতে শুরু করেছেন, দিম্মা কাঁদতে শুরু করেছেন । দুই মামী বুঝে উঠতে পারছেন না, কাকে সামলাবেন, একবার মাকে সামলাচ্ছেন আরেকবার দিম্মাকে । দাদু ভয়ানক গম্ভীর মতো হয়ে গেছেন, আর সুবর্ণ দাদার কাছে জানতে চাইলেন যে মামারা কোথায় গেছেন । উত্তরে দাদা জানালো যে মামারা থানায় গেছেন পুলিশকে খবর দিতে । সবাই মিলে এই ঘটনার জন্যে দুষতে লাগলো বর্ণা দিদিকে । শুধু সুবর্ণ দাদা যে করেই হোক, বড়দিকে নিয়ে চলে গেলো উপরের ঘরে ।
মূহূর্তে বদলে গেলো বাড়ির হাসিখুশি, উৎসবের পরিবেশ । বড়দি দোতলার একটা ঘরে গিয়ে শুধু কাঁদতে লাগলো, টাপুর কিন্তু রয়ে গেলো দিদির কাছে, দিদিকে ছেড়ে গেলো না । কেননা একমাত্র সে-ই বুঝতে পারছে যে, এই ঘটনায় দিদির সেরকম কোন দোষ নেই । সুবর্ণ দাদা ভালো করে বারবার করে তাদের থেকে জেনে নিলো কোথায়, কখন কিভাবে ঘটনাটা ঘটেছে, আর জেনে নিয়ে বেশ কয়েকটা কল করলো সে মোবাইল থেকে । মনে হয়, তার বন্ধুদের ফোন করে ডেকে পাঠালো, আর বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাইরে ।
কিছুক্ষণ বাদে পুলিশরা চলে এলো তাদের বাড়িতে, সঙ্গে মামারাও । তারা এসে টাপুর আর বর্ণা দিদিকে ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে অনেক প্রশ্ন করতে লাগলো, বিশেষত: দিদিভাইকে । তারপরে তারা কিছুক্ষণ মামাদের সঙ্গে কথা বলে, মায়ের থেকে টুপুরের একটা ফটো নিয়ে চলে গেলো । মামারা বাবা আর ভালো কাকুকে ফোন করে খবর দিলো । দুপুর বেলার দিকে বাবাও চলে এলেন । বিকালবেলায় ভালোকাকু আর তার দুই বন্ধু পুলিশ অফিসার চলে এলেন একটা পুলিশের গাড়ি করে । সবাই মিলে বর্ণা দিদি আর তার কাছে প্রায় একই কথা জানতে চাইছিলো বারবার । টাপুরের আর ভালো লাগছিলো না একই কথা বারবার বলতে । বর্ণাদিদি শুধু কাঁদছিলো, যতো লোকজন এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলো, তার কান্না আরো বাড়ছিলো । সুবর্ণ দাদা আর তার বন্ধুরা গোটা এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে বাইক নিয়ে, কিন্তু টুপুরকে কোথাও পাওয়া গেলো না ।
টাপুরের অদ্ভুত অনুভূতি
টাপুরের একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো, আসলে তার মনে হচ্ছিলো টুপুর কাছাকাছিই যেন কোথাও আছে, সে যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি বোধ করছিলো । কিন্তু সে কাউকে এইসব কথা বলতে পারছিলো না । আর কেমন যেন মনে হচ্ছিলো যে , টুপুর যেন প্রচুর আইসক্রিম, চকোলেট ইত্যাদি খাচ্ছে ।
সন্ধ্যাবেলায়, একটা ফোন এলো বাবার মোবাইলে, টুপুরের মুক্তির জন্যে মুক্তিপণ চেয়ে । সত্তর লাখ টাকা তারা দাবি করলো টুপুরের মুক্তির জন্যে । বাবা কয়েকটা দিন সময় চাইলেন টাকাটা যোগাড় করার জন্যে । আসলে ভালো কাকু আর তার বন্ধু পুলিশ অফিসারেরা আগে থেকেই বাবাকে সব শিখিয়ে দিয়েছে । তারা দু’দিন সময় দিয়েছে টাকা যোগাড় করার জন্যে । দু’দিনের মধ্যে যদি টুপুরকে পুলিশ খুঁজে বার করতে না পারে, তাহলে টাকা দিয়ে টুপুরকে নিয়ে আসতে হবে ।
টাকাটা চেয়ে ফোনটা আসার পরে ভালো কাকু জানালেন তাহলে একটা বিষয় পরিষ্কার হলো, যে টুপুরকে কেউ বা কয়েকজন মিলে কিডন্যাপ বা অপহরণ করেছে । সে এমনি এমনি হারিয়ে যায়নি বা পথ ভুলে যায়নি এবং এই কাজটা যে বা যারা করেছে তারা আগে থেকেই প্ল্যান করে করেছে । হয়তো কয়েকদিন আগে থেকেই তারা অনুসরণ বা ফলোও করছিলো, সুতরাং এই ঘটনার জন্যে বর্ণার খুব একটা দোষ নেই । সে আজকে ওদের নিয়ে বেরিয়েছিলো - সুযোগ পেয়ে ওরা এই কাজটা ঘটিয়েছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, পরে তারা সুযোগ পেলে এই ঘটনা ঘটাতো না । আজকে সুযোগ না পেলে হয়তো তারা অপেক্ষা করতো, পরে ঘটাতো এই ঘটনাটা । যাই হোক, একটা অপরাধ যখন ঘটেছে তাই আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে । যদিও কেউই বুঝলো না, এতে তাদের কি ধরনের সুবিধা হবে ।
সন্দেহজনক লোক
ভালো কাকু আর তার বন্ধুরা সবাই মিলে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো থানায় কিছু বিষয় আলোচনা করতে । আর বলে গেলো, যদি অপহরণকারীরা আবার ফোন করে তাহলে তাদের ফোন করে অবশ্যই জানাতে এই বলে তারা বেরিয়ে গেলেন থানার দিকে । সুবর্ণ দাদা টাপুরকে নিয়ে উপরে নিজের ঘরে নিয়ে চলে গেলো । ঘরে গিয়ে দাদাভাই জানতে চাইলো, যে গত কয়েকদিনের মধ্যে কেউ তাদের পিছু নিয়েছিলো কিনা । কোন অস্বাভাবিক, অচেনা লোকজনকে টাপুর গত কয়েকদিনের মধ্যে তাদের বাড়ির আশেপাশে বা স্কুলের আশেপাশে খেয়াল করেছে কিনা মনে করতে । টাপুরের সেইরকম কিছু মনে পড়লো না । তবে একটা ঘটনার কথা তার মনে পড়লো, বেশ কয়েকদিন আগে একটা ফ্রেঞ্চকাট দাড়িওয়ালা লোক তাদের বাড়ির সামনে একটা সাদা গাড়ি করে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে তাদের বাড়ির দিকে তাকিয়েছিলো । সে যখন স্কুল থেকে ফিরছিলো মানে স্কুল বাস যখন তাদের বাড়ির সামনে তাদের ছেড়ে দিচ্ছিলো, তখন সে দেখেছিলো লোকটা তাদের বাড়ির উল্টোদিকের রাস্তায় একটা সাদা রঙের গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে কি দেখছে । আবার যখন সে খাবার-দাবার খেয়ে তাদের দোতলার ঘরের জানালার কাছে গিয়েছিলো, তখনও সে দেখেছে যে লোকটা সাদা গাড়িটার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বাড়ির দিকে তাকিয়েছিলো । তারপরে সে টি.ভিতে কার্টুন দেখতে দেখতে লোকটার কথা ভুলে গিয়েছিলো । এখন তার লোকটার কথা মনে পড়লেও সে দাদাভাইকে কথাটা বলা উচিত হবে কিনা ভাবছিলো । সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে লোকটার কথা দাদাভাইকে বলেই দিলো । সঙ্গে সঙ্গে সে খেয়াল করলো দাদাভাইয়ের মুখটা যেন একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠলো । দাদাভাই তার কাছে জানতে চাইলো যে টাপুর লোকটার ছবি দেখলে আবার তাকে চিনতে পারবে কিনা । সে উত্তরে ঘাড় নেড়ে জানালো – হ্যাঁ, সে চিনতে পারবে । সুবর্ণ দাদা তাকে একটা চকোলেট দিয়ে আর টি.ভি খুলে দিয়ে বললো, তুই আমার ঘরে বসেই টি.ভি দ্যাখ, বাইরে গেলে তোর ভালো লাগবে না । আমি একটা ফোন করে আসছি ।
সেই রাতটা কোনরকমে কেটে গেলো । ভালো কাকু আর তার বন্ধুরা যে কখন বাড়ি ফিরেছিলো তা টাপুরের মনে নেই । তবে অনেক রাতেই হবে বলে মনে হয়, কারণ বাড়ির সবাই অনেক রাত অবধি জেগেছিলো, বিভিন্ন রকম কথাবার্তা হচ্ছিলো বড়দের মধ্যে । মা মাঝেমাঝেই কেঁদে উঠছিলো, বর্ণা দিদি উপরের ঘর থেকে আর নামেইনি । অনেক রাতে টাপুর ঘুমিয়ে পড়ছে দেখে ছোটমামী তাকে একটু খাইয়ে সুবর্ণাদিদির কাছে শুইয়ে দিয়েছিলো ।
পরদিন সকালে টাপুর ঘুম থেকে উঠে দেখলো ভালো কাকু আর তার বন্ধুরা চা, জলখাবার খেয়ে তৈরী হয়ে বাবার সঙ্গে কিসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে । টাপুর আসতেই সুবর্ণদাদা বললো, টাপুর তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নে । আজকে আমরা ভালোকাকুর সঙ্গে গাড়িতে করে থানায় যাবো, সেখানে তোকে অনেক লোকের ছবি দেখানো হবে । তুই যদি সেই লোকটাকে চিনতে পারিস তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দেখিয়ে দিবি লোকটাকে । ব্যস, তাহলেই সেই লোকটাকে ধরলেই আমরা পেয়ে যাবো টুপুরকে । এই কথা বলে সে সুবর্ণাদিদিকে বললো, তাড়াতাড়ি ওকে কিছু খাইয়ে-দাইয়ে রেডি করে দে । সুবর্ণা দিদি তাকে নিয়ে চলে এলো ঘরের ভিতরে । আর মুখ-টুখ ধুইয়ে, অল্প কিছু খাইয়ে, জামা-কাপড় পরিয়ে রেডি করে দিলো ।
টাপুর আর সুবর্ণদাদা, ভালোকাকু আর তার বন্ধুদের সঙ্গে ভালোকাকুর আনা গাড়িটাতে করে যেতে লাগলো থানার দিকে । ভালো কাকু কেমন বদলে গেছে এই দু’দিন । আর তেমন হইচই করছে না, মজা করছে না, গল্পও করছে না টাপুরের সঙ্গে, গল্পও বলছে না, খালি কথা বলে যাচ্ছে তার একজন বন্ধুর সঙ্গে, তার অন্য আরেকজন বন্ধু গাড়ি চালাচ্ছে । টাপুর ছোট হলেও বুঝতে পারছে আসলে সবাই টুপুরের জন্যে খুব চিন্তায় আছে । তারও মনটা খুব ভালো নেই । তারা তো মজা করতে এসেছিলো মামাবাড়িতে, কি থেকে যে কি হয়ে গেলো ! আজ রথের মেলা, কিন্তু কেউ মেলায় যাওয়ার কথা উচ্চারণও করছে না । অধচ অন্যান্যবার কি মজাই না হয় । রথের দিন সকাল বেলায় দাদু তাদের সবাইকে, মানে তারা দুই বোন, বর্ণাদিদি, সুবর্নাদিদি আর সুবর্ণদাদকে নিজের ঘরে ডেকে সবাইকে রথের মেলায় ঘুরতে যাওয়ার জন্যে, মেলায় খরচের জন্যে সবার হাতে টাকা দেন । এমনকি বড়দেরও মানে মামাদের, মামীদের, মাকে সবাইকে টাকা দেন খরচের জন্যে । আর সকাল থেকে তাদের ভাইবোনেদের এমনকি মামীদেরও বিভিন্ন রকমের প্ল্যান শুরু হয়ে যায়, কে কি কিনবে, রথের মেলায় কি চড়বে ইত্যাদি । আর সঙ্গে আছে বিভিন্ন রকমের খাওয়া-দাওয়া । সকাল বেলায় লুচি, আলুর তরকারি, জিলিপি ইত্যাদি দিয়ে সকালের খাওয়া শুরু হয় আর সারাদিন ধরে চলে বিভিন্ন রকমের খাওয়া-দাওয়া । মামা-মামীরা জানতে চান, তারা কি খাবে, সেই অনুযায়ী বাজার আনা হয় । সারাদিন ধরে চলে হুল্লোড়, হইচই, টি.ভি দেখা ইত্যাদি ।
খুব তাড়াতাড়িই তারা থানায় পৌঁছে গেলো । টাপুরকে বসিয়ে থানার একজন পুলিশ আঙ্কল একের পরে একজনের ছবি দেখাতে লাগলো । টাপুরের পাশে একদিকে বসে আছে সুবর্ণদাদা, আরেকপাশে বসে আছে ভালো কাকু । তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ভালোকাকুর বন্ধুরা । সবাই তাকিয়ে আছে ছবির দিকে, যদি কোন একটা ছবি দেখে টাপুর বলে ওঠে এই ছবিটাই সেই লোকটার ! কিন্তু না, সেইরকম কিছুই হলো না । কারণ, পুলিশদের দেখানো ছবিগুলোর মধ্যে একটাও সেই লোকটার ছবি নেই । সব ছবি দেখানো হয়ে গেলে টাপুর দেখলো ভালোকাকু যেন বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে ।
আইসক্রিম ক্লু
থানার বাইরে এসে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে ভালোকাকু টাপুরকে একটা আইসক্রিম কিনে দিলেন আর তারা সবাই চা-বিস্কুট খাচ্ছিলেন । আইসক্রিম খেতে খেতে হঠাৎ টাপুর বলে উঠলো জানো কাকু কেন জানিনা আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে টুপুর না কাল থেকে প্রচুর আইসক্রিম খাচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে ভালো কাকু তার কাছে জানতে চাইলেন, কেন তোর এইরকম মনে হচ্ছে কেন ? তখন টাপুর বলে উঠলো, কেন জানিনা, এই দু’দিনে তো আমি একটাও আইসক্রিম খাইনি, কিন্তু এই আইসক্রিমটা খেতে খেতে মনে হচ্ছে যেন এই দু’দিন প্রচুর আইসক্রিম খেয়েছি । কিন্ত আমি জানি, টুপুরের আইসক্রিমে কক্ষনো অরুচি আসবে না । আর কখনো কখনো ও প্রচুর আইসক্রিম বা চকোলেট খেলে আমার এইরকম মনে হয় ।
ভালো কাকুর মূখটা যেন চকচক করে উঠলো খুশিতে । আর তিনি বলে উঠলেন, সুবর্ণ এক্ষুনি দু’টো বাইক যোগাড় করতে পারবে ? দাদাভাই, সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, একটু সময় দাও আমি দেখছি । বলে সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । ভালো কাকু তার বন্ধুদের বললেন, গাড়িটা কোথাও রেখে তোমরা যে জায়গাটায় ঘটনাটা ঘটেছে সেখানে পৌঁছে যাও, আমরা সেখানে পৌঁছাচ্ছি । আর খেয়াল রাখবে কেউ যেন বুঝতে না পারে তোমরা আসলে কারা ।
সুবর্ণ দাদা এবং ভালো কাকুর অনুসন্ধান
সুবর্ণদাদা ফোন করতেই তার দু’জন বন্ধু দু’টো বাইক নিয়ে এসে হাজির হয়ে গেলো । একটা বাইকে সুবর্ণদাদা টাপুরকে নিয়ে উঠলো, আর তার অন্য একজন বন্ধুর বাইকে বসলো ভালোকাকু । তারপরে বাইকদুটো এসে হাজির হলো যেখান ধেকে টুপুর অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলো তার থেকে একটু দূরে । সেখানে দাঁড়িয়ে ভালো কাকু বললেন, সুবর্ন তুমি একা টাপুরকে সঙ্গে নিয়ে যাও, যেখানে ও যেতে চায় যেতে দেবে, তুমি শুধু হাত কয়েক দূর থেকে ওকে ফলো করবে । আর আমি একটু দূরত্ব রেখে তোমায় ফলো করবো । সুবর্ণ দাদার বন্ধু দু’জনকেও ভালোকাকু বললেন, বাইক গুলো আশেপাশে কোথাও রেখে তোমরাও সাধারণ লোকেদের মতো ঘুরে বেড়াও, যেন তোমরা এই পাড়ারই ছেলে । আর চেষ্টা করবে আমায় ফলো করার, আগ বাড়িয়ে কেউ কিছু করতে যাবে না, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে অস্ত্র-শস্ত্র থাকতে পারে । আর টাপুর তোমায় কিছু টাকা দিলাম, তুমি একটা আইসক্রিম পার্লার দেখে কয়েকটা আইসক্রিম কিনে খাও ।
টাপুর একটু এগিয়ে গেলো । পেছন পেছন বেশ কয়েক হাত দূরে সুবর্ণ, আর তার পেছনে কিছুটা দূরে ভালো কাকু । আর ভালো কাকুর পরে সুবর্ণর দু’জন বন্ধু । টাপুর হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলো । বেশ কিছুটা হাঁটার পরে সে ঠিক আগের দিন যেখান থেকে টুপুর অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলো সেখানটায় এসে উপস্থিত হলো । তারপরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে হঠাৎ হাঁটতে লাগলো কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বামদিকের একটা গলিতে । সেই গলিটা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পরে সে চলে এলো আবার একটু বড় রাস্তায়, অন্য একটা পাড়ায় । সুবর্ণ বেশ আশ্চর্য হচ্ছিলো, কারণ টাপুর এমনভাবে যাচ্ছিলো যেন এইসব গলি, রাস্তা তার সব চেনা । আরো বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে টাপুর একটা বড় দোকানে ঢুকলো আর বেশ বড়সড় একটা আইসক্রিম কিনে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আরাম করে খেতে লাগলো ।
ভালোকাকু, সুবর্ণ দাদা সবাই দুর থেকে টাপুরকে লক্ষ্য করছিলো । বেশ কিছুক্ষণ পরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে একটা লোক আসছিলো দোকানের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে, হঠাৎ সামনে টাপুরকে দেখতে পেয়ে সে যেন দিনের বেলা ভূত দেখেছে এইরকম আশ্চর্য হয়ে গেলো, আর কেন জানি না সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে ঘুরে দৌড়তে শুরু করলো । সুবর্ণও শুরু করলো লোকটার পেছনে পেছনে দৌড় । আর কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটা স্পট জাম্প করে সুবর্ণ লোকটার ঠিক পায়ের গোছে ক্যারাটের একটা কিক কষিয়ে দিলো । লোকটা মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো । সে উঠে আবার দৌড় শুরু করার আগেই সুবর্ণর আরেকটা কিক উড়ে এসে পড়লো ঠিক লোকটার মুখে । লোকটা তার মুখ চেপে ধরে বসে পড়লো, আর সেই সুযোগে সুবর্ণ তাকে পিছন থেকে এমনভাবে পেঁচিয়ে ধরলো যে, লোকটা পালাবে কি তার শ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছিলো । আর এর মধ্যেই ভালোকাকু আর তার বন্ধুরা, সুবর্নের বন্ধুরা এসে লোকটাকে ঘিরে ধরলো ।
ভালোকাকু লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি এই বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে পালাচ্ছিলে কেন ? সে ভালোকাকুর কথার কোন উত্তরই দিলো না । ভালোকাকু দু’বার জিজ্ঞাসা করলো, লোকটা কোন উত্তর দিলো না । সুবর্ন এক লাথি কষিয়ে দিলো তার মুখে । সে কঁকিয়ে উঠলো যন্ত্রণায়, কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দও বার করলো না । ইতিমধ্যেই ভালোকাকুর একজন বন্ধু পুলিশকে খবর দিয়ে দিয়েছে, সুবর্ণর বন্ধুরা বাইক দুটো নিয়ে এসেছে আর বাইকে করে আইসক্রিম পার্লার থেকে নিয়ে চলে এসেছে টাপুরকেও । ভালোকাকু ক্রমাগত লোকটাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছিলো, কিন্তু লোকটা মুখ দিয়ে একটা শব্দও বার করছিলো না । সুবর্ণ মাথা গরম করে লোকটাকে লাথি, ঘুঁষি মেরে যাচ্ছিলো । সুবর্ণের মারের চোটে তার মুখ ফেটে রক্তও বার হচ্ছিলো, কিন্তু তবুও লোকটা মুখ খুলছিলো না । তখন ভালোকাকু সুবর্ণকে বললো, ছেড়ে দাও সুবর্ণ, পুলিশ আসছে, মুখ খোলাবার অনেক রকম রাস্তা পুলিশের জানা আছে ।
অজানা বাড়ির খোঁজে টাপুর
কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের ভ্যান চলে এলো । টাপুর সুবর্ণর গা ঘেঁষে দাড়িয়ে লোকটাকে দেখছিলো । লোকটাও মাঝেমাঝেই টাপুরকে দেখছিলো, আর তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো যে, টাপুরকে দেখে সে আশ্চর্য হয়েছে । পুলিশ এসে লোকটাকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুললো । ভালোকাকু তার একজন বন্ধুকে বললেন, পুলিশের ভ্যানে লোকটার সঙ্গে যেতে । আর সুবর্ণকে বললেন, চলো সুবর্ণ বাড়ি ফিরে যাই । টাপুর বলে উঠলো, বাড়ি চলে যাবে, আর টুপুর, টুপুরকে নিয়ে যাবে না ? ভালোকাকু বললেন, এই লোকটা যখন ধরা পড়েছে, তখন ওর থেকেই জানা যাবে টুপুরকে ওরা কোথায় রেখেছে । তারপরে টুপুরকে খুঁজে বার করা সহজ হয়ে যাবে । টাপুর বললো, না টুপুরকে আজ সঙ্গে নিয়েই বাড়ি যাবো । ও খুব কাছাকাছিই কোথাও আছে, আমি বুঝতে পারছি । ভালোকাকু বলে উঠলেন, মানে ? তুই কি করে বুঝছিস ? টাপুর বললো, আমি বুঝতে পারি, আর এখন আরো বেশি করে বুঝতে পারছি । আমরা দু’জনে ছোটবেলা থেকেই সবসময় একসঙ্গে থেকেছি, কক্ষনো আলাদা হইনি । এইবারে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বুঝতে পারছি, আমরা দু’জনে কাছাকাছি থাকলে একরকম অনুভূতি হয়, আর দুরে চলে যাওয়ার পরেই কিরকম যেন একটা অন্যরকম লাগছে । কিন্তু এখানে আসার পর থেকেই আমি বুঝতে পারছি, অনুভব করছি যে টুপুর কাছাকাছিই কোথাও আছে । ওর কথা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই সুবর্ণ বলে উঠলো, তুমি যদি যেতে চাও তাহলে যাও কাকু, কিন্তু আমি টাপুরকে নিয়ে টুপুরকে একটু খুঁজে দেখে যেতে চাই ।
এরপরে আর ভালোকাকু কোন আপত্তি করলেন না । সুবর্ন টাপুরকে বুঝিয়ে দিলো যেখানে তার মনে হচ্ছে যে টুপুর রয়েছে, সে যেন তাদের সেখানে নিয়ে যায়, ঠিক আগেকার মতো । ভালোকাকু আর তার একজন বন্ধু, সুবর্ণর দুই বন্ধু আবার ছড়িয়ে পড়লো আর টাপুরকে লক্ষ্য করে চলতে লাগলো । এইবারে তফাৎ শুধু একটাই - সুবর্ণ টাপুরের হাত ধরে সঙ্গেই যাচ্ছে ।
বেশ কিছুটা হেঁটে যাওয়ার পরে একটা বেশ ফাঁকা মতো জায়গায় একটা পুরানো বাড়ির কাছাকাছি এসে পৌঁছালো তারা সবাই । টাপুর দূর থেকে বাড়িটাকে দেখিয়ে বললো, টুপুর ওইখানেই আছে । ভালোকাকুর বন্ধু বেশ আশ্চর্য হচ্ছিলেন, যে টাপুর কি করে বুঝছে । তখন ভালো কাকু তাকে বললেন, টুপুরকে দেখলেই তুমি ব্যাপারটা বুঝতে পারতে, আসলে ওরা দু’জনে যমজ বোন । ভালোকাকু বাড়িটার চারপাশটায় নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে একবার ঘুরে এলেন । তারপরে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন যে সবাইকে কিরকম করে চারদিক থেকে ঘিরে ঢুকতে হবে । সুবর্ণর একজন বন্ধুকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, যে সে টাপুরকে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকবে এবং টাপুরের নিরাপত্তার দায়িত্ব তার । সে প্রথমে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না, আসলে সে এই রকম একটা অ্যাকশনের মূহুর্তে যোগ দেওয়ার সুযোগ হারাতে চাইছিলো না । কিন্তু সুবর্ণ তাকে বোঝানোর পরে সে রাজি হয়ে গেলো এবং টাপুরকে নিয়ে দূরে চলে গেলো ।
টুপুরের উদ্ধার হওয়া
টাপুর আর সুবর্ণের বন্ধু দূরে চলে যাওয়ার পরে ভালো কাকু আর তার বন্ধু জামার পেছন থেকে বার করলেন দু’জনের সার্ভিস রিভলবার । সুবর্ণের অন্য বন্ধুকে কিছুটা দূরে দাঁড় করানো হলো যদি কেউ পালাবার চেষ্টা করে বা এসে পড়ে তাহলে তাকে বাধা দেওয়ার জন্যে অধবা কেউ আসলে সাবধান করে দেওয়ার জন্যে । সামনের দরজা দিয়ে রিভলবার নিয়ে ঢুকবার জন্যে রেডি হলো ভালো কাকুর বন্ধু আর সুবর্ণ আর ভালো কাকু গেলেন পিছনের দিকে বাড়িটায় ঢোকার কোন সুযোগ আছে কিনা দেখে আসার জন্যে ।
পিছনের দিকে গিয়ে সুবর্ণরা দেখলো বাড়ির পিছনের দরজাটা ভেজানো রয়েছে । সামনে ভালোকাকু রিভলবার নিয়ে আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন, পেছন পেছন সুবর্ণ । পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকে তারা একটা ঘর থেকে টি.ভির আওয়াজ পেলেন । সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে তারা একটু এগিয়ে এসে দেখতে পেলেন একটা হলঘরের মতো জায়গা, আর সেখানে তাদের দিকে পেছন ফিরে একটা লোক কানে ইয়ারফোন দিয়ে সোফায় বসে মোবাইলে ভিডিয়ো দেখছে । সুবর্ণ আর ভালোকাকু দুইভাগে ভাগ হয়ে লোকটার দিকে এগোতে লাগলেন । আর কিছূটা এগিয়ে যাওয়ার পরেই লোকটা ভালোকাকুকে রিভলবার হাতে দেখতে পেলো, আর সে আশ্চর্য হয়ে কিছু করে ওঠার আগেই পিছন থেকে সুবর্ণ এসে তাকে হাত দিয়ে তার গলার কাছে এমনভাবে চাপ দিয়ে ধরলো যে সে কিছু তো করতে পারলোই না, বরং তার শ্বাস রোধ হয়ে তার চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে লাগলো । সুবর্ণ লোকটাকে এমনভাবে ধরে ছিলো, যে সে গলা দিয়ে সামান্য আওয়াজটুকুও বার করতে পারছিলো না লোকটা । ভালোকাকু তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখে নিলেন তার কাছে কোন অস্ত্র আছে কিনা । আর ইশারা করে সুবর্ণকে জানিয়ে দিলেন যেন সুবর্ণ লোকটাকে ওইরকম ভাবেই ধরে রাখে, আর তিনি রিভলবার নিয়ে যে ঘর থেকে টি.ভির আওয়াজ আসছে সেই ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন ।
ভালোকাকু আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলেন টি.ভির ঘরটার দিকে । সুবর্ণ যেখানে ছিলো সেখান থেকে দেখতে পাচ্ছিলো ঘরটার দরজাটা । ভালো কাকু রিভলবারটা নিয়ে গিয়ে আগে ভালো করে উঁকি মেরে দেখে নিলেন, ঘরের ভিতরে কেউ আছে কিনা । তারপরে আস্তে আস্তে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেলেন । সুবর্ণ বাইরে থেকে সব দেখতে পাচ্ছিলো আর তার টেনশন হচ্ছিলো যে, ভিতরে কি হচ্ছে । কিন্তু কিছু মূহুর্ত পরেই সে দেখতে পেলো যে, ঘরের ভেতর থেকে ভালোকাকুর হাত ধরে আসছে টুপুর । ভালোকাকু টুপুরের হাত ধরেই আগে দরজার কাছে গিয়ে জানিয়ে দিলেন ভিতরের অবস্থাটা আর বাইরের দরজা খুলে দিতেই তার বন্ধু ঢুকে এলো । আর এসেই ঘরের পরিস্থিতি দেখে ছুটে এসে আগে সুবর্ণের ধরা লোকটির হাতটাকে পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে দিলেন । সুবর্ণ লোকটার গলাটা ছেড়ে দিতেই সে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে লাগলো । ভালোকাকু এগিয়ে এসে লোকটির কাছে জানতে চাইলো ঘরে আর কেউ আছে কিনা । উত্তরে সে জানালো যে, না ঘরে আর কেউ নেই, তার আরো একজন সঙ্গী আছে, তবে সে বাইরে গেছে আইসক্রিম আনতে বাচ্চাটার জন্যে । তখন ভালোকাকু তাকে জানিয়ে দিলেন, সে আগেই ধরা পড়েছে এবং এখন সে আছে পুলিশের হেফাজতে । সেই কথা শুনে লোকটি একটু মুষড়ে পড়লো, আর জানালো যে তাদের দু’জনের দায়িত্ব ছিলো বাচ্চা মেয়েটাকে পাহারা দেওয়া আর দেখাশোনা করার, বাকি কিছু তারা জানে না ।
সুবর্ণ টুপুরের কাছে জানতে চাইলো যে এরা তাকে কোনরকম কষ্ট দিয়েছে কিনা । উত্তরে টুপুর জানালো যে, সে এখানে বেশ মজাতেই ছিলো । কারণ যাতে সে চিৎকার চেঁচামেচি না করে তাই এরা তাকে প্রচুর আইসক্রিম, চকোলেট ইত্যাদি দিয়ে টি.ভি চালিয়ে রেখে দিয়েছিলো, আর সে যা যা চাইছিলো, তাই পাচ্ছিলো এদের কাছ থেকে । সে এখানে খুব মজাতেই ছিলো । এই কথা শুনে সুবর্ণর হাসি পেয়ে গেলো আর সে টুপুরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগলো আর কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে গেলো বাইরে যাওয়ার জন্যে । বাইরে আসতেই টাপুর এগিয়ে এসে তার বোনকে জড়িয়ে ধরলো আর দু’জনে বকবক করতে লাগলো । ভালোকাকু আবার পুলিশকে ফোন করে ডেকে পাঠালেন । এবারে পুলিশের দু’টো গাড়ি এলো । একটা গাড়ি করে ভালোকাকু আর সুবর্ণ টাপুর আর টুপুরকে নিয়ে বাড়ির দিকে গেলেন, পিছনে পিছনে বাইকে করে সুবর্ণের বন্ধুরা । আর অন্য গাড়িটাতে করে ভালোকাকুর বন্ধু আর পুলিশেরা অন্য লোকটিকে নিয়ে গেলো থানার দিকে ।
আইসক্রিমেই বাজিমাত
সারা রাস্তা টাপুর আর টুপুর দু’জনে বকবক করতে লাগলো । গাড়ি গিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতেই বাড়ির সবাই চলে এলো বাড়ির বাইরে । আর গাড়ি থেকে টাপুর আর টুপুর দু’জনে নামতেই গোটা বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি লেগে গেলো । তাদের মা ছুটে এসে টুপুরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন । বাবা এগিয়ে এসে টুপুরকে কোলে তুলে নিলেন আর সুবর্ণ তুলে নিলো টাপুরকে । দু’জনে বাড়িতে ঢুকতেই উপরের ঘর থেকে বর্ণাদিদি ছুটে এসে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে টুপুরকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো । ভালোকাকু এগিয়ে এসে গোটা পরিবেশটা হাল্কা করে দেওয়ার জন্যে বললেন – টুপুর এখন থেকে আগামী একমাস আর আইসক্রিম খাবে না, ওখানে ও এতো আইসক্রিম খেয়েছে । আর ওর এই আইসক্রিমের বায়নার জন্যেই ব্যাটারা ধরা পড়ে গেলো । বাকি আছে একজন পালের গোদা, যে পিছন থেকে এই চক্রটাকে চালাচ্ছে । খুব শিগগিরিই সেটাও ধরা পড়ে যাবে ।
দিন-তিনেক পরে এক সন্ধ্যাবেলায় টাপুর-টুপুরদের মামাবাড়িতে দারুণ খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হলো । সেখানে সবাই উপস্থিত হয়েছেন । মামাবাড়ির সবাই, টাপুর-টুপুরদের ওবাড়ি থেকেও সবাই এসেছেন । এসেছে সুবর্ণের বন্ধুরা, ভালোকাকু আর তার বন্ধুরাও উপস্থিত । রয়েছেন থানার বড়বাবুও । আসলে যে দু’জন ধরা পড়েছে তাদের থেকে কধা উদ্ধার করে ধরা পড়েছে তাদের দলের মূল পান্ডা, টাপুরের সেই ফ্রেঞ্চকাট দাড়িওয়ালা লোকটা, সঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন ছেলেধরা এবং উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু বাচ্চা ।
ভালোকাকু সবার সামনে বলছিলেন, টাপুর-টুপুরদের জন্যেই ধরা পড়লো একটা গোটা ছেলেধরার চক্র । তবে টুপুরকে উদ্ধার করার জন্যে সুবর্ণ যা করেছে তাতে তার ওকালতি পড়া ছেড়ে পুলিশে যোগ দেওয়া উচিত এবং সে যদি চায় তাহলে ভালোকাকু এখুনি ব্যবস্থা করে দেবেন । তার সঙ্গে অসাধারণ সহযোগিতা করেছে তার বন্ধুরা । তবে সব থেকে বড় ভুমিকা নিয়েছে টাপুর, তারা দু’জনে যমজ হওয়ার জন্যেই বোধহয় এতো তাড়াতাড়ি এরা ধরা পড়লো । তবে সব থেকে বড় ভূমিকা আছে টুপুরের আইসক্রিমের । কারণ, টাপুরের সেদিন আইসক্রিম খাওয়ার সময় বলা কধাগুলোই শুরু করেছিলো সেদিনকার ঘটনাবলীর । টুপুরকে আইসক্রিম সাপ্লাই দিতে গিয়েই ধরা পড়ে গেলো গোটা দলটা । আর তাই আজ সবার জন্যে একটা সারপ্রইজের ব্যবস্থা করেছি আমি – বলে ঢাকা দেওয়া একটা ঢাকনা তিনি খুলে দিলেন, আর খুলে গেলো ঢাউস সাইজের একটা বিরাট বাক্স - আর তাতে রয়েছে রকমারী আইসক্রিম !
গল্প পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো । আর যদি আপনার জানা এই ধরনের কোন গল্প জানা থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান, আমরা আপনার গল্পটিকে আকার দেওয়র চেষ্টা করবো । যদি আরো বিভিন্ন স্বাদের গল্প পড়তে চান , যেমন - ভালোবাসার গল্প, রহস্য গল্প, বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীর গল্প তাহলে ক্লিক করুন - গল্পের ঝুলি

0 মন্তব্যসমূহ